Header Ads

yX Media - Monetize your website traffic with us

দুর্বল স্টুডেন্টদের জন্য - Motivational Story



প্রায় এক হাজার বছর আগের কথা। প্রাচীন ভারতে তখনকার দিনে বিদ্যালয় বলতে টোলকেই বোঝাতো। একবার, সেরকমই এক টোলের পণ্ডিতমশাই একটি খারাপ ছাত্রকে মারতে মারতে টোল থেকে বের কর দিলেন।
পণ্ডিতমশাইয়ের কড়া আইন, যেন, সে টোলের দরজা আর না মাড়ায়! মনে একরাশ দুঃখ নিয়ে, মাথা নীচু করে বেরিয়ে এলেন ছেলেটি।
তাঁর অপরাধ? অপরাধ একটাই, তিনি এক্কেবারে পড়াশোনা পারেন না! ক্লাসের সবচেয়ে খারাপ ছাত্র। ক্লাসে পণ্ডিতমশাই ব্যাকরণের সূত্র যা শেখান-- সেসব, কিছুতেই মনে রাখতে পারেন না। বুঝতেও পারেন না।
তাই পণ্ডিতমশাইয়ের খুব রাগ তাঁর ওপর। অমন আপদ টোলে আসার চেয়ে, টোল উঠে যাওয়াই বরং ভালো!
ছেলেটির মনে খুব দুঃখ হল। তিনি ভাবলেন, আমি বুঝি সত্যিই খুব খারাপ ছাত্র, আমাকে দিয়ে লেখাপড়া হবে না। বিদ্যেবুদ্ধি আমার কিচ্ছুটি নেই। বাবার মানসম্মান সব ডুবিয়ে ছাড়লাম, পণ্ডিতমশাইয়েরও প্রিয় হতে পারলাম না!
আমি তো ব্যাকরণের সব সূত্র মনে রাখতে চাই , কিন্তু কিছুতেই যে মনে থাকে না! ক্লাসের পড়াতো আমি বুঝতে চাই কিন্তু কিছুতেই আমি বুঝতে পারি না!
-দুঃখী ছেলেটি এসব ভাবতে ভাবতে, হাটতে হাটতে এলেন একটা পুকুরের সান বাঁধানো ঘাটে। সেখানে এসে বসলেন। হঠাত তাঁর চোখ পড়ল ঘাটের পাথরের ওপর-- একটা গোল দাগ। পুকুরের বাঁধানো ঘাটের-- পাথরগুলো, সব ঠিকঠাকই আছে, শুধু একটি নির্দিষ্ট জায়গাতে গোল চাকতির মত একটি গর্ত।
তাঁর মনে প্রশ্ন জাগল, এরকম শক্ত পাথরের গায়ে কেমন করে হল এই দাগ?  মন খুঁজতে লাগল এই প্রশ্নের উত্তর।
এমন সময় একজন নারী ঐ পুকুরে জল নিতে এলো। কলসিতে জল ভরে নামিয়ে রাখল দাগ হওয়া পাথরের ওপর।
তখনই তাঁর চোখে ভেসে উঠল- দিনের পর দিন কলসির ঘষায় ঘষায় কঠিন পাথরের ওপর গোল দাগ হয়ে গেছে। কারণটা এভাবে খুঁজে ফেলতেই বোপদেবের মনে যেন বিদ্যুতের ঝিলিক মেরে গেল। নিরেট পাথরের বুকে দিনের পর দিন যদি ঘষা লেগে দাগ হতে পারে, তাহলে বার বার পাঠ করে আমিইবা পড়া মনে রাখতে পারব না কেন? বার বার চেষ্টা করে আমিইবা পড়া বুঝতে পারব না কেন? কেন? আমি কি পাথরের চেয়েও নিরেট?
- তিনি ছুটে গেলেন পণ্ডিতমশাইয়ের কাছে, গিয়ে বললেন তাঁর উপলব্ধির কথা-পন্ডিতমশাই অবাক হয়ে চেয়ে রইলেন ছাত্রের দিকে।
এই তো চোখ খুলেছে, এই তো মনের বিস্তার ঘটেছে, মন ভাবতে শিখেছে----ভাবাতেই তো তিনি চেয়েছেন বার বার, সেই চিন্তনের পাঠ, বোপদেব পেয়েছেন প্রকৃতি থেকে, গুরু হিসেবে তিনি উপলক্ষ্য হলেন বটে, তবে প্রকৃতিই যেন তাঁকে শিক্ষা দিয়ে গেল। যে পুত্রসম ছাত্রকে তিনি টোল থেকে বের করে দিয়েছিলেন, তাকেই তার বুকে পরম স্নেহে জড়িয়ে ধরলেন।
তারপর, পণ্ডিতমশাইয়ের শিক্ষা পেয়ে বোপদেব হয়ে উঠেছিলেন পরম পণ্ডিত। তাঁর কাছে যে ব্যাকরণ শাস্ত্র ছিল একেবারে দুর্বোধ্য, সেই শাস্ত্রের সূত্রগুলি নিয়েই তিনি একদিন রচনা করেছিলেন 'মুগ্ধবোধ ব্যাকরণ' নামের বিখ্যাত গ্রন্থটি। এমন সহজবোধ্য ব্যাকরণ সেকালে আর দ্বিতীয়টি ছিল না। অপমান থেকে আত্মজিজ্ঞাসা, ক্ষণিকের দেখা থেকে দর্শন---বোপদেবের চোখ খুলে দিয়েছিল। কঠোর সংকল্প ও অধ্যাবসায়ের এক অনবদ্য নজির স্থাপন করে ফেলল, পড়া না পারা ক্লাসের সবচেয়ে খারাপ ছাত্রটি।

No comments

Powered by Blogger.