Header Ads

yX Media - Monetize your website traffic with us

Apple CEO Tim Cook's Commencement Speech at Duke University || ভিড়ের মধ্যে নয়, একলা দাঁড়িয়ে নিজেকে চেনো: টিম কুক

ভিড়ের মধ্যে নয়, একলা দাঁড়িয়ে নিজেকে চেনো: টিম কুক



(অ্যাপলের প্রধান নির্বাহী টিম কুক। গত ১৩ মে যুক্তরাষ্ট্রের ডিউক ইউনিভার্সিটির সমাবর্তনে বক্তা ছিলেন তিনি।)

ক্যাম্পাসে ফিরে এসে আজ আমি ভীষণ আনন্দিত। সমাবর্তন বক্তা এবং ডিউকের একজন স্নাতক হিসেবে তোমাদের সামনে দাঁড়ানো আমার জন্য এক বিরল সম্মান।

১৯৮৮ সালে ফুকুয়া স্কুল থেকে ডিগ্রি অর্জন করেছি। বক্তব্যটা তৈরি করার সময় মনে পড়ছিল সেই সময়ের আমার একজন প্রিয় অধ্যাপকের কথা। তাঁর নাম বব রেইনহেইমার। তিনি আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ের শিক্ষক ছিলেন। বক্তৃতার কলাকৌশলও ছিল তাঁর ক্লাসের অংশ।
অসাধারণ সব স্মৃতি জড়িয়ে আছে এই ক্যাম্পাস ঘিরে—পড়ালেখা করা এবং না করা।

পেছনে তাকিয়ে দেখ, তোমরা তোমাদের জীবনের একটা বিশেষ অংশকে আজ বিদায় জানাচ্ছ। সামনে তাকাও। এমন একটা সময়ে তোমরা বাইরের পৃথিবীতে পা রাখছ, যখন তোমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। আমাদের দেশে অনেক বিভক্তি আছে। অধিকাংশ আমেরিকান নিজের মতের বাইরে ভিন্ন মত গ্রহণ করতে পারেন না। আমাদের পৃথিবী যেভাবে উষ্ণ হচ্ছে, ক্রমেই সেটা একটা ভয়ংকর ফলের দিকে যাচ্ছে। অথচ অনেকেই এই সত্যটা স্বীকার করেন না। একটা অসম সমাজে আমাদের বসবাস। সব ছাত্রকে সুশিক্ষার নিশ্চয়তা আমরা দিতে পারি না। ভেব না এত সব সমস্য সমাধানের শক্তি তোমাদের নেই।

তোমরাই সবচেয়ে শক্তিশালী প্রজন্ম। তোমরা যত দ্রুত পরিবর্তন আনতে পার, সেটা আর কেউ পারেনি। উন্নয়নের গতি নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। পৃথিবীকে বদলে দেওয়ার মতো প্রযুক্তি, প্রতিভা তোমাদের আছে। পৃথিবীর ইতিহাসে বেঁচে থাকার এটাই শ্রেষ্ঠ সময়। তোমার জীবনটা নিয়ে তুমি কী করতে চাও, বেছে নাও। তোমার প্রেরণা তোমাকে যে পথে নেয়, সেদিকেই যাও।

তোমাদের প্রতি আমার নিবেদন, যে শক্তি তোমাদের হাতে আছে, ভালো কিছুর জন্য সেটা কাজে লাগাও। তোমরা যখন এই পৃথিবী ছেড়ে যাবে, তখন যেন তোমার দেখা পৃথিবীর চেয়েও একটা সুন্দর পৃথিবী রেখে যেতে পার।

জীবনটাকে আমি আগে কখনোই এতটা পরিষ্কারভাবে দেখতে পাইনি। আমি শিখেছি, কখন চিরায়ত জ্ঞানকে ভেঙে ফেলতে হয়, সেই শিক্ষাটাই জীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আশপাশে যে পৃথিবীটা দেখছ, সেটাকে অবশ্যম্ভাবী বলে মেনে নিয়ো না। আমার সৌভাগ্য, এমন একজন মানুষের কাছ থেকে আমি এটা শিখেছি, যিনি এ কথা গভীরভাবে বিশ্বাস করতেন। তিনি জানতেন, ‘পথ নয়, লক্ষ্য অনুসরণ’ই হলো পৃথিবী বদলানোর প্রথম ধাপ। তিনি আমার বন্ধু, আমার পরামর্শক স্টিভ জবস। একটার পর একটা নিয়ম ভাঙার মধ্য দিয়েই দারুণ কিছু তৈরি হয়, এটাই ছিল স্টিভের দর্শন। তাঁর সেই নীতি আজও অ্যাপলকে পথ দেখায়।

 ‘আমরা কী করতে পারি’—সেটা প্রশ্ন নয়। প্রশ্ন হলো, ‘আমাদের কী করা উচিত?’ প্রতিদিন আমরা নিজেদের এই প্রশ্নটার সামনে দাঁড় করাই। কারণ স্টিভ আমাদের শিখিয়েছেন, পরিবর্তন এভাবেই আসে। যেভাবে চলছে, সেভাবেই চলুক—এটা যেন কখনোই আমরা মেনে না নিই।

আমি বিশ্বাস করি, তরুণদের মধ্যে এই মনোভাব সহজাতভাবেই আসে। তোমার মধ্য থেকে এই অস্থিরতাকে কখনো হারিয়ে যেতে দিয়ো না। আজকের অনুষ্ঠান তোমাকে শুধু একটা ডিগ্রি দিচ্ছে না, তোমার দিকে একটা প্রশ্নও ছুড়ে দিচ্ছে। বর্তমান স্থিতাবস্থাকে তুমি কীভাবে চ্যালেঞ্জ করবে? কীভাবে তুমি পৃথিবীটাকে সামনের দিকে নেবে?

১৩ মে, ১৯৬৮। আজ থেকে ৫০ বছর আগে রবার্ট কেনেডি যখন নেবরাস্কায় প্রচারণা চালাচ্ছিলেন, তখন একদল তরুণের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছিল। সেই তরুণেরাও এই একই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিল।

সময়টা তখন খুব অস্থির। ভিয়েতনামের সঙ্গে যুদ্ধ চলছে। আমেরিকার কোনো কোনো শহরে হানাহানি হচ্ছে। মার্টিন লুথার কিংকে হত্যার ধাক্কা দেশটা তখনো সামলে উঠতে পারেনি। কেনেডি সেই শিক্ষার্থীদের একটা কিছু করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। কেনেডি বলেছিলেন, আশপাশে তাকিয়ে দেখ, চারদিকে বৈষম্য ও দারিদ্র্য, অন্যায়, অবিচার। অন্তত তুমি তো এটা মেনে নিতে পার না।

আজ কেনেডির কথা আবারও এখানে প্রতিধ্বনিত হোক।

‘অন্তত তুমি তো এটা মেনে নিতে পার না।’

যে পথই তোমরা বেছে নাও না কেন। চিকিৎসা, বাণিজ্য, প্রকৌশল, মানবিক—যা-ই তোমাকে আলোড়িত করুক না কেন; যেভাবে চলছে সেভাবেই চলুক, এর চেয়ে উন্নয়ন সম্ভব নয়, অন্তত তুমি তো এটা মেনে নিতে পার না।

 ‘এখানে এভাবেই সব চলে’ এই কথা তো আর যার মুখেই হোক, তোমার মুখে মানায় না। ডিউকের স্নাতকেরা, অন্তত তোমরা এটা বোলো না। পরিবর্তন তো তোমরাই আনবে। তোমরা বিশ্বমানের শিক্ষা পেয়েছ। অনেক কষ্টের পর এসেছে এই অর্জন। খুব কম মানুষ এই সুযোগ পায়। সামনে এগোনোর যোগ্যতা, দায়িত্ববোধ তোমাদের আছে। কাজটা সহজ নয়। সাহস থাকা চাই। কিন্তু এই সাহস শুধু তোমাকেই একটা অসাধারণ জীবন দেবে তা নয়, আশপাশের মানুষগুলোর জীবনটাও বদলে দেবে।

মার্টিন লুথার কিংয়ের মৃত্যুর ৫০ বছর উপলক্ষে গত মাসে আমি বার্মিংহাম গিয়েছিলাম। তাঁর সঙ্গে যাঁরা কাজ করেছিলেন, সেই মানুষগুলোর সঙ্গে কিছুটা সময় কাটানোর অভূতপূর্ব সুযোগ আমার হয়েছে। তাঁদের মধ্যে অনেকেই কিন্তু সেই সময় তোমাদের চেয়েও ছোট ছিল। মা-বাবার কথা অগ্রাহ্য করে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাঁরা পুলিশের কুকুর আর জলকামানের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিলেন। দ্বিতীয়বার ভাবার প্রয়োজন তাঁরা বোধ করেননি।

কারণ তাঁরা জানতেন, পরিবর্তন আনতেই হবে। কারণ তাঁরা ন্যায়বিচারে বিশ্বাস করেছিলেন। কারণ তাঁরা জানতেন, শত দুর্দশার মধ্যেও আগামী প্রজন্মকে একটা সুন্দর পৃথিবী উপহার দেওয়ার সুযোগ তাঁদের সামনে আছে। তাঁদের কাছ থেকে আমরা শিখতে পারি। যদি পৃথিবী বদলানোর ইচ্ছে থাকে, তোমাকে নির্ভীক হতে হবে।

সমাবর্তনের দিন আমার যেমন বোধ হচ্ছিল, তোমাদেরও যদি তা-ই হয়ে থাকে, তাহলে অনুমান করতে পারি তোমরা ঠিক পুরোপুরি নির্ভীক হতে পারছ না। হয়তো ভাবছ, কোথায় কাজ করব, কীভাবে শিক্ষাঋণ পরিশোধ করব, কীভাবে বাঁচব...। আমি জানি, এগুলো সত্যিই ভাববার বিষয়। এই দুশ্চিন্তা আমারও ছিল। কিন্তু এই দুর্ভাবনা যেন তোমাকে পরিবর্তন আনতে বাধা না দেয়।

কোথায় পৌঁছাব সেটা না জেনেও প্রথম পদক্ষেপ নেওয়াটাই হলো নির্ভীকতা। এর অর্থ হলো স্রেফ হাততালির চেয়েও বড় কিছু পাওয়ার লক্ষ্যে সামনে এগোনো। এর মানে হলো ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে নয়, একলা দাঁড়িয়ে নিজেকে চেনা।

ব্যর্থতার ভয়কে উপেক্ষা করে যদি সামনে পা বাড়াও, তোমরা যদি একে অপরের সঙ্গে কথা বল, নম্রতা ও উদারতা ধরে রেখে কাজ করে যাও; কেউ দেখুক বা না দেখুক, কেউ স্বীকৃতি দিক বা দিক, বিশ্বাস কর, আশপাশের সব তুচ্ছ হয়ে যাবে।

এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো, বড় বড় সমস্যাগুলো যখন তোমার সামনে আসবে, তোমরা তখন সেটা মোকাবিলা করতে পারবে। নির্ভীকভাবে চেষ্টা করে যাওয়ার এই মুহূর্তগুলোই আমাদের সারা জীবন অনুপ্রাণিত করে।

পার্কল্যান্ড, ফ্লোরিডার সেই শিক্ষার্থীদের মতো নির্ভীক হও, যারা সহিংসতার মহামারির সময় চুপ থাকেনি। সেই নারীদের মতো নির্ভীক হও, যাঁরা বলেছেন ‘মি টু’। তাঁদের মতো নির্ভীক হও, যাঁরা শরণার্থীদের অধিকারের জন্য লড়াই করছেন।

ডিউকের স্নাতকেরা, নির্ভীক হও।



ইংরেজি থেকে অনুবাদ: মো. সাইফুল্লাহ
সূত্র: টাইম ডটকম

No comments

Powered by Blogger.